২ অক্টোবর ২০২৫ - ২০:৩৩
গাজাগামী নৌবহর নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কলম্বিয়ার হুঁশিয়ারি ।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা- নৌবহরে যেকোনো হামলার বিষয়ে ইসরায়েলকে কতর্কা করেছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): কলোম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, “বেসামরিক, মানবিক এবং শান্তিপূর্ণ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ওপর ইসরায়েলের যেকোনো আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।”


“সুমুদ” আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো স্থিতিশীলতা বা অটলতা। এই ফ্লোটিলা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বেসামরিক নেতৃত্বাধীন সামুদ্রিক মানবিক উদ্যোগ। এতে ৫০টিরও বেশি জাহাজ এবং ৪৬টিরও বেশি দেশের হাজার হাজার অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। বর্তমানে এতে মোট ৪৯৭ জন কর্মী রয়েছেন।

সর্বশেষ আপডেটে কর্মীরা জানিয়েছেন, কিছু অচিহ্নিত জাহাজ ফ্লোটিলার কয়েকটি নৌকার কাছে এসেছে, যেগুলোর কিছু ছিল নিভু নিভু অবস্থায় (আলো বন্ধ)। নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করে অংশগ্রহণকারীরা সেগুলো আটকানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন।

তারা লিখেছেন, “জাহাজগুলো এখন ফ্লোটিলা ছেড়ে চলে গেছে। আমরা গাজার দিকে অগ্রসর হচ্ছি এবং ১২০ নটিক্যাল মাইল পেরোচ্ছি—সেই এলাকায়, যেখানে অতীতে অনেক ফ্লোটিলা আটকানো বা আক্রান্ত হয়েছে।”

ড্রপ সাইট নিউজ সূত্রে জানা গেছে, “ইসরায়েলি নৌবাহিনীর জাহাজগুলো গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বাধা দিতে এগিয়ে আসছে। এখনো কোনো জাহাজে অভিযান চালানো হয়নি, তবে বেশ কয়েকটি নৌকার সিসিটিভি সিগন্যাল ব্যাহত হয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা যেকোনো মুহূর্তে অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।”

২০২৫ সালের জুলাই মাসে ফ্লোটিলা যাত্রা শুরু করে, যখন গাজায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছে যায়। এর লক্ষ্য হলো খাদ্য, ওষুধ এবং জরুরি সহায়তা সরবরাহ করা এবং একইসঙ্গে গাজার ওপর ইসরায়েলের সামুদ্রিক অবরোধকে চ্যালেঞ্জ জানানো।

সংগঠকরা সতর্ক করে বলেছেন, “আজ রাতেই অথবা আগামীকাল সকালে ইসরায়েলি হামলার সম্ভাবনা রয়েছে।” তারা বিশ্ববাসীকে তাদের সরকারগুলোর ওপর চাপ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন ফ্লোটিলাকে নিরাপদে পৌঁছাতে দেওয়া হয়।

তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ফ্লোটিলার ওপর হামলা মানেই ফিলিস্তিনের ওপর হামলা।” তারা উল্লেখ করেছেন যে, এই মিশনটি প্রতীকী ও বাস্তব দিক থেকে গাজার ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—যারা ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েলের কঠোর অবরোধে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি সেবার চরম ঘাটতিতে ভুগছেন।

কর্মীরা বলেছেন, অবরোধ ভাঙা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে একটি নৈতিক ও আইনি কর্তব্য এবং তারা ঝুঁকি সত্ত্বেও তাদের যাত্রা চালিয়ে যাবেন।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিভিন্ন ফ্লোটিলা জাহাজ আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলার মুখে পড়েছে, বিশেষ করে তিউনিসিয়া ও গ্রিস উপকূলে সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ। সেখানে আগুন লাগানোর মতো বোমা, শব্দ বোমা এবং অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। তবে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এই উদ্যোগের আয়োজক ও সমর্থকরা, যেমন জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রানচেস্কা আলবানিজ, আন্তর্জাতিক সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে, ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ঘোষণা দিয়েছেন, ফ্লোটিলাকে গাজার উপকূলে পৌঁছাতে দেওয়া হবে না। তিনি অংশগ্রহণকারীদের “সম্ভাব্য সন্ত্রাসী” আখ্যা দিয়ে জাহাজ জব্দ এবং কর্মীদের কারাগারে পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

ফ্লোটিলা নেতারা এ ধরনের অভিযোগকে “ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডা” হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বলেছেন, এগুলো আগ্রাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা।

২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ইতালি ঘোষণা করে, তারা ফ্লোটিলা গাজার ১৫০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ঢুকে গেলে তাদের নৌ-সঙ্গরক্ষা প্রত্যাহার করে নেবে, কারণ এতে “কূটনৈতিক সংকট” তৈরি হতে পারে।

ইতালির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গুইডো ক্রোসেট্টো এক চূড়ান্ত অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কর্মীরা যেন গন্তব্য পরিবর্তন করে সাইপ্রাসে ত্রাণ খালাস করেন। তবে আয়োজকরা এই প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তারা জানিয়েছেন, “এটা সুরক্ষা নয়, বরং ফ্লোটিলার মিশনের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত।” তারা ইতালির অবস্থানকে ইসরায়েলি অবরোধে সহযোগিতা বলে অভিহিত করেছেন।

স্পেনও পূর্বে সামরিক সঙ্গরক্ষা দিয়েছিল, কিন্তু এখন ফ্লোটিলা কোনো সুরক্ষার সঙ্গেই এগোচ্ছে না, যার ফলে সংঘর্ষের আশঙ্কা আরও বেড়েছে।

এই উদ্যোগের অন্যতম উল্লেখযোগ্য সমর্থকদের মধ্যে আছেন পরিবেশ কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, যিনি বলেছেন, “আমাদের আটকানো হলে, সেটি আমাদের সরকারগুলোর ব্যর্থতার কারণে হবে।”

এছাড়া ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছেন রাজনীতিবিদ রিমা হাসান, নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি জ্‌ওয়েলিভেলি ম্যান্ডেলা, শিল্পী ও মানবাধিকার কর্মীরা।

জাহাজগুলো ইতালি, স্পেন, গ্রিস ও তিউনিসিয়াসহ ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগরীয় বিভিন্ন দেশ থেকে যাত্রা শুরু করেছে। কেবল ইতালি থেকেই ৪৫ টনের বেশি সহায়তা বহন করা হচ্ছে। মালয়েশিয়া এবং অন্যান্য দেশের পক্ষ থেকেও সাহায্য এসেছে।

যদি কোনো বাধা না আসে, তবে ফ্লোটিলা তিন দিনের মধ্যে গাজা পৌঁছাতে পারে এবং নতুন একটি মানবিক করিডোর স্থাপন করতে পারে।

এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে অতীতের ফ্লোটিলাগুলোর অভিজ্ঞতা, বিশেষত ২০১০ সালের “মাভি মারমারা” হামলা, যেখানে ইসরায়েলি কমান্ডোরা জাহাজে অভিযান চালিয়ে ১০ জন কর্মীকে হত্যা করেছিল, এবং বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছিল।

বিশ্বব্যাপী সহানুভূতির জোয়ার দেখা গেছে—ইতালির ৭০টিরও বেশি শহরে বিক্ষোভ, তিউনিসে অবস্থান ধর্মঘট এবং সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha